আবদুল গফুর হালী - আর কত দিন খেলবি

আবদুল গফুরের জন্ম ১৯২৯ সালে পটিয়ার রশিদাবাদে। রশিদাবাদ সাধকশিল্পী আস্কর আলী পণ্ডিতের গ্রাম। আস্কর আলীর গান শুনে বড় হয়েছেন গফুর। ছোটবেলায় তাঁর আধ্যাত্মিক ও মরমি গান গফুরের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
তখন গফুরের বয়স ২২-২৩ বছর। একদিন তাঁকে যাত্রা অনুষ্ঠানের মঞ্চে তুলে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গান শুনে সবাই প্রশংসা করলেন। তবে গফুরের বাবা এসব পছন্দ করতেন না। গান না করার জন্য অনেক শাসন করেছেন। শেষে ঘরে আনলেন বউ। বাবা ভেবেছিলেন, বিয়ে দিলে হয়তো ছেলে সংসারী হবে। হলো উল্টো।
১৯৫৫-৫৬ সালের কথা, বিয়ের পর বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসারী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আবদুল গফুরও। টুকটাক আয়-রোজগারও করছিলেন। বাবার পুরোনো ব্যবসাটা রপ্ত করে নিচ্ছিলেন। এ সময় একদিন আচমকা হাজির হলেন ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারে। এখানেও গানের টান। রমেশ শীল, বজলুল করিম মন্দকিনি, মৌলানা হাদীর মাইজভান্ডারি গান তাঁর মনোজগত্ বদলে দেয়। লাল পোশাক পরা লোকজন যখন মাইজভান্ডারে ঢোল বাজিয়ে গাইতেন, তখন তিনি আর স্থির থাকতে পারতেন না। তাঁদের সঙ্গে গলা মেলাতেন। একদিন মাইজভান্ডারের ভক্তদের অনুরোধে গাইতে হলো আবদুল গফুরকে। গান শেষ করার পর দেখলেন, (গফুরের জবানিতে) — মনে হলো, আমার ওপর অদৃশ্য শক্তি ভর করেছে। এই দরবার যেন সব জাতির মিলনমেলা! মাইজভান্ডারের প্রেমসাগরে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। ওখান থেকে আসার পর আমাকে কে যেন বলছেন, ‘লেখ লেখ।’ একদিন গান বাঁধলাম—
‘আর কত কাল খেলবি খেলা
মরণ কি তোর হবে না
আইল কত গেল কত
কোথায় তাঁদের ঠিকানা।’
এরই মধ্যে অডিশনের ঘোষণা শুনে আগ্রাবাদের বেতার ভবনে হাজির হলেন। অডিশনে সেই গানটিই গাইলেন, ‘আর কত দিন খেলবি খেলা...।’ বেতারে তখন সরাসরি গান প্রচার হতো। গ্রামে পৌঁছার আগেই গান প্রচার হয়ে গেল।
বাড়ির পাশে রৌশনহাট রেলস্টেশন। গফুরের গান শুনে গ্রামের শত শত মানুষ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। ট্রেন থেকে নামার পর তাঁকে কাঁধে করে বাড়ি পৌঁছে দিল তারা।