শেফালী ঘোষ - রইস্যা বন্ধু ছাড়ি গেল গই আঁর বুগত ছেল মারি (অচিন্ত্যকুমার চক্রবর্তী)

সূর্য ওডের লে ভাই লাল মারি,
রইস্যা বন্ধু ছাড়ি গেল গই আঁর বুগত ছেল মারি।

শঙ্খ খালর কুলর উয়র (ও ভাই)
রইস্যা বন্ধুর ঘর
লাগত পাইলে কইও তারে
(মোর) পরানর খবর
নিদয়া বন্ধুর জ্বালায়রে
পরান আমার যায় ছাড়ি।

শঙ্খ খালর পানিরে কালা
কালা দুশমন
তার্তুন অধিক কালা (অভাই)
পাষাণ বন্ধুর মন
ফিরিয়া না চাইল বন্ধুরে
অবলারে গেল ছাড়ি।।

আহ! এই গানে কী অপরূপ প্রেম আর কী অনুপম বিচ্ছেদ যাতনা! শঙ্খ খালের কূলে যে ‘রইস্যা বন্ধুর’ ঘর সে তো সাম্পান-মাঝিই হবে। আর সাম্পান মাঝি মানেই তো সেই বাঁশরিয়া যে চোখের ইশারাতে প্রেম শেখায়। এই গানে রইস্যা বন্ধুকে শঙ্খের ‘কালা পানি’র সাথে তুলনা করেছেন কবি।

সাম্পানমাঝি নিয়ে অসাধারণ গানগুলো কীভাবে লেখা হলো? এমন প্রশ্নের উত্তরে আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তী শিল্পী আবদুল গফুর হালী বললেন, ‘আজ থেকে ৪০/৫০ বছর আগেও আমার গ্রাম পটিয়ার রশিদাবাদ থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসার একমাত্র মাধ্যম ছিল সাম্পান। সন্ধ্যায় শঙ্খ খালের ঘাটে গিয়ে সাম্পানে উঠতাম, চানখালী খাল দিয়ে মধ্যরাতে সাম্পান পৌঁছাত পটিয়ার ঈন্দ্রপুলে। সেখানে যাত্রাবিরতি। বাড়ি থেকে আনা ‘ভাতের মোচা’ খুলতাম আমরা। খাওয়ার পর আবার রওয়ানা দিতাম। সকালে চাটগাঁ শহরের সদরঘাটে পৌঁছাত সাম্পান। তখন তো গাড়ি ছিল না। সাম্পান ছিল মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাভাবিকভাবে সাম্পান ও সাম্পানমাঝি নিয়ে গান ও নাটক লেখা হয়েছে অসংখ্য।