লালনগীতি - মায়া নদী কেমনে যাবি বাইয়া (পবন দাস বাউল)

মায়া নদী কেমনে যাবি বাইয়া
রঙ্গিলা দেশের নাইয়া।।

রঙ্গিলা দেশের নাইয়া "আমি"। আর মায়া নদী মানে জীবন নদী।

ও নাইয়া রে, অষ্ট ইঞ্চি নদীর দিক
খাউজ কাটা মাপের ঠিক
চার আঙ্গুল যায়গা পাড়ি দাওনা।

তুমি বেহুশ হইয়া পাড়ি দিলে রে
মালামাল সব যাবে হারাইয়া।
রঙ্গিলা দেশের নাইয়া
মায়া নদী কেমনে যাবি বাইয়া।

এ নদী বড়ো ভয়াবহ নদী। পারাপারে অসতর্ক হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়াটাই নিয়তি। ‘বেহুইশারী’ অর্থাৎ হুশিয়ার না হয়ে _ অজ্ঞানে অসাবধানে এ নদী পাড়ি দিলে সব ‘মালামাল’ খোয়া যাবে।

ও নাইয়া রে, সেই না নদীর হুমার চোটে
পাড় ভাঙ্গিয়া পানি ছোটে
কত শত সাধের বাগান গেল রে ভাসিয়া;
ও কতো সাধুজনা ভেসে ফিরে রে...
ফিরে সে মায়া নদী দিয়া।

ও নাইয়া রে, এই না নদীর পিছল ঘাট
ছয় রমণী ধইরাছে ঠাট
তাদের রূপ দেখিয়া যাইও না ভুলিয়া
রূপ দেখিয়া ভুইলা গেলে রে
মরবি তুই হাবুডুবু খাইয়া।

‘ছয় রমণী’:
১. কাম - যৌন সঙ্গকামনা, রিরংসা, যৌনক্ষুধা। (Sexual urge)
২. ক্রোধ - রাগ, উত্তেজনার বশীভূত হওয়া। (Anger)
৩. লোভ - লালসা । (Cupidity)
৪. মোহ - মায়া, বিভ্রম । (Illusion)
৫. মদ - অহংকার, গর্ব, আত্মগৌরব। (Arrogance)
৬. মাৎসর্য - পরশ্রীকাতরতা, অন্যের ভালো দেখতে না পারা। (Envy)
মায়া নদী আসলে এই মানব দেহ। একটু অসাবধান হলেই যা 'বিবেক' নামক বিবেচনাবোধ পরিত্যাগ করে রিপুর তাড়নায় ইন্দ্রিয় তৃপ্তিতে লিপ্ত হবে এবং মরবে 'হাবুডুবু খাইয়া'।

সুতরাং 'মায়া নদী' পার হতে গেলে 'ছয় রমণীর' তথা ষড় রিপুর আহ্বান উপেক্ষা করে চলতে হবে।