উকিল মুন্সী - আমার শূয়াচান পাখি

শূয়া চাঁন পাখি মানে, "শুয়ে আছে আমার চাঁন পাখি।'

উকিল মুন্সি ছিলেন তখন বাউল রশিদউদ্দিনের সংগে পালা গানের বায়নায়। পায়ে হেটে তখন এক-দেড় দিনের রাস্তা, কালিয়াজুরি থেকে নেত্রকোনা সাব ডিভিশনে আস্তে লাগতো তখন। আসার সময় স্ত্রী বলেছিলেন, আপনি তো যাইতাসুন বায়নায়, আমার'তো মনে হয় কালা জ্বর (Visceral leishmaniasis, Sahib's disease, Dumdum fever, Black fever) হইয়া গেছে (কালা জ্বরে তখন বাঁচতো না মানুষ)। পালা গানের আসরে খবর আসলো, ঐ এক-দেড় দিন হেটে, আপনার স্ত্রীকে দেখতে চাইলে তাড়াতাড়ি চলেন আমার সাথে। এরই মধ্যে স্ত্রী মারা গেলেন। কবর খোড়া হয়েছে, জানাজা হয়েছে, রশিদউদ্দিন (উনি সিনিয়ার ছিলেন) উনিও সাথে আ্সলেন। তখন কবরের পাশে উকিল মুন্সি স্ত্রীর মাথাটা কোলে নিয়ে উনি এই গানটা ওইখানেই রচনা করে গাইলেন,

শুয়াচান পাখি, আমার শূয়াচান পাখি
আমি ডাকিতাছি তুমি, ঘুমাইছ নাকি।।
তুমি আমি জনম ভরা,
ছিলাম মাখামাখি,
আজ কেন হইলে নীরব,
মেলো দুটি আঁখি।

বুলবুলি আর তোতা ময়না
কত নামে ডাকি,
তোরে কত নামে ডাকি
শিকল কেটে চলে গেলে,
কারে লইয়া থাকি।।

(তোমার আমার এই পিরিতি
চর্ন্দ্র সূর্য্য সাক্ষী,
হঠাত করে চলে গেলে
বুঝলাম না চালাকিরে পাখি
আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি।)

উকিল মুন্সি জখন কাঁদতেছেন এই গানটি করে, বাউল রশিদউদ্দিন উনাকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য একটি অন্তরা গেয়েছিলেন,
বিশ্বজোড়া এই পিরিতি,
সবই দেখছি ফাঁকি রে উকিল, সবই দেখছি ফাঁকি,
বাউল রশিদ বলে চল রে উকিলললললল,
ডাকলেই বা হইবো কি,
তারে, ডাকলেই বা হইবো কি,
পাখি, আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি।
শুয়াচান পাখি, আমার শূয়াচান পাখি,
আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি।।