বাউল কামাল পাশা / উকিল মুন্সী - পুবালি বাতাসে (বারী সিদ্দিকি)

- - - কামাল উদ্দিন - - -
আষাঢ় মাসের ভাসা পানিরে, ও পানি পূবালী বাতাসে
বাদাম দেখে চাইয়া থাকি, আমার নি কেউ আসেরে।।
কল কলাইয়া শব্দ শুনি, নতুন পানির ধ্বনি
শব্দ শুনে অভাগিনীর, কাঁদিছে পরানীরে।।
একা ঘরে বসত করি, কে করবে আদর
ভাইও নাই বান্ধবও নাই মোর, কে লইবে খবর ওরে।।
বৈশাখ গেল জৈষ্ঠ্য আইল, গাছে পাকা আম
আইলায় না মোর প্রাণের বন্ধু, কারে খাওয়াইতামরে।।
আমার এক বৎসর হইল গত, আমার কে নিবে খবর
বাউল কামাল উদ্দিন আশায় থাকি, না নিল নাইওররে ।।

- - - উকিল মুন্সী - - -
আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে পূবালী বাতাসে
বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি আমার নি কেউ আসে রে।।
যেদিন হতে নয়া পানি আইলো বাড়ির ঘাটে সখী রে
অভাগিনীর মনে কত শত কথা ওঠে রে।।
গাঙে দিয়া যায় রে কত নায়-নাইওরির নৌকা সখী রে
মায়ে-ঝিয়ে বইনে-বইনে হইতেছে যে দেখা রে।।
আমি যে ছিলাম গো সখী বাপের গলায় ফাঁস সখী রে
আমারে যে দিয়া গেল সীতা-বনবাস রে।।
আমারে নিল না নাইওর পানি থাকতে তাজা সখী রে
দিনের পথ আধলে যাইতাম রাস্তা হইত সোজা রে।।
কতজনায় যায় রে নাইওর এই না আষাঢ় মাসে সখী রে
উকিল মুন্সীর হইবে নাইওর কার্তিক মাসের শেষে রে।।

বর্ষা মৌসুমে বিবাহিত নারীর বাবার বাড়ি নাইওর যাওয়ার প্রসঙ্গটি তার গানে এসেছে দ্বৈত-মিশ্র অনুভূতি নিয়ে- কখনো আক্ষরিক অর্থে বাবার বাড়ি, আবার কখনো মুর্শিদকে মাধ্যম ধরে পরমাত্মার কাছে ফেরার তীব্র অভিপ্রায় নিয়ে। দূরবর্তী বাবার বাড়ি শুষ্ক মৌসুমে নারীর পক্ষে হেঁটে যাওয়া দায়। তাই হাওর অঞ্চলের গৃহবধূরা বর্ষায় নৌকায় করে বাবার বাড়ি বেড়াতে যায়, নাইওর যায়। এই প্রকৃতিদর্শন ও পরমাত্মার কাছে ফিরে যাওয়ার আধ্যাত্মবোধ তার গানকে আলাদা দ্যোতনায় আলাদা ব্যঞ্জনা দিয়েছে। বাবা বা পরমপুরুষের কাছে ফিরতে উকিলের অবলম্বন ‘আষাঢ়’, ‘তাজা’ পানি। এই বিস্তীর্ণ তাজা পানির আলোড়নে আলোড়িত উকিল মুন্সি।