ভাটিয়ালি গান - নিশীথে যাইও ফুলো বনে, রে ভ্রমরা (শেখ ভানু)

শেখ ভানু (জন্মঃ ১৮৪৯ -মৃত্যু ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ): শেখ ভানু সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। শেখ ভানু ছিলেন ধানের বেপারী। তিনি গ্রাম অঞ্চল থেকে ধান ক্রয় করে ভৈরব, মদনঞ্জ মোহনগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় বিক্রি করতেন। একদিন ভরা বর্ষায় মেঘনা নদী দিয়ে ধানের নৌকা নিয়ে শেখ ভানু বাড়ি ফিরছিলেন । হাঠাৎ জলস্রোতে ভেসে যাওয়া একটি মৃত দেহ তাঁর চোখে পরল। তিনি দেখলেন শবের উপরে বসে একটি কাক লাশের চোখ ঠুকরিয়ে খাচ্ছে। শেখ ভানু মানব দেহের এ পরিণতি দেখে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মনের আবেগে বললেন হায়-রে সোনার তনু - - আখের তোর এই হাল। এভাবে শেখ ভানু সংসারের অনিত্যতা প্রত্যক্ষ করে, দুনিয়ার মোহ, মায়া, লোভ প্রভৃতি ত্যাগ করে আল্লাহর পথে ফকির হয়ে পরমাত্মার সন্ধান করতে থাকেন।

নিশীথে যাইয়ো ফুলবনে ও ভ্রমরা
নিশীথে যাইয়ো ফুলবনে

(নয় দরজা করিয়া বন্ধ লইয়ো ফুলেরও গন্ধ
অন্তরে জপিও বন্ধুর নামরে ভ্রমরা
নিশীথে যাইয়ো ফুলবনে )

জ্বালাইয়া দিলেরও বাতি
ফুল ফুটিবে নানা জাতি গো
কতো রঙ্গে ধরবে ফুলের কলি রে ভ্রমরা
নিশীথে যাইয়ো ফুলবনে

(ডালপালা তার বৃক্ষ নাই
এমনও ফুল ফুটাইছে সাঁই
ভাবুক ছাড়া বুঝবে না পণ্ডিতে
ও ভ্রমরা নিশীথে যাইয়ো ফুলবনে)

অধীন শেখ ভানু বলে
ঢেউ খেলাইয়ো আপন দিলেতে
পদ্ম যেমন ভাসে গঙ্গার জলে রে ভ্রমরা
নিশীতে যাইয়ো ফুলবনে।

আমার ডাল যেন ভাঙে না,
আমার ফুল যেন ছিড়ে না,
ফুলের ঘুম যেন ভাঙে না।
যেও তুমি নীরব চরণে
- রে ভোমরা।
নিশিতে যাইও ফুলবনে।

নিশীথে যাইয়ো ফুলবনে ও ভ্রমরা
নিশীথে যাইয়ো ফুলবনে।