রাজ্জাক দেওয়ান - কেন ভিক্ষা করে মুসলমান

কেন ভিক্ষা করে মুসলমান?
মানব-বাদী পাঠাও আল-কোরান।
একবার ধ্যান করিলে শুনতে পাবি,
আছে মাওলার খাস জবান।

কোরানে নামাজের কথা,
"ওয়াকিমুস সালাতা"।
ওয়াকিমও খোদারে করা,
আগে তারে জান।
নইলে, বাঁকা লাঠি সোজা করা,
দেখবিরে বিশ্বের কল্যান।

হজ-জাকাত, ধনীর' কুরবানী,
মন তুমি জেনে, জাননি,
আত্মত্যাগ করিতে কয়,
সাঁই কাদের-গনি।
এইদেখ যা হাইয়াছে সাধু-জ্ঞানী,
তাঁরাই ইমান হুসমদান।

কোরান পড়লে হবে কি?
ও তার ব্যাখ্যা না বুঝি।
অনুমানে সারা কোরান,
মুখস্ত করেছি।
এইবার, বেকার ভুগায় স্বপ্ন আমার,
কোরানকে করসি চালান।

ধর্মে বলে পরের উপকার,
মন তুমি জানো সমচার,
এর উপরে বড় ধর্ম নাই,
বলতেসে পরওয়ার।
তুমি, কবে কি কইরাছো রে কার?
শুনতে চায় রাজ্জাক দেওয়ান।

কোরান শরিফ ঘোষণা করছে যে, হজরত লুত, হজরত ইব্রাহিম এবং প্রত্যেক নবিই জাকাত দিয়েছেন। প্রত্যেক নবিই যদি জাকাত দিয়ে থাকেন এবং জাকাতের অর্থ যদি মাল ও আড়াই টাকা হয়, হজরত আদম (আ.) কাকে জাকাত দিলেন? কোরান বলছে, আল্লাজিনাহুম লিজ্ জাকাতে ফায়েলুন অর্থাৎ ‘তারা (বিশ্বাসীরা) সদা-সর্বদা জাকাতের জন্য কর্মতৎপর থাকে।’ যদি জাকাত বলতে টাকার অথবা মালের ট্যাক্স বোঝায় তা হলে যে জাকাত দিচ্ছে তার আর সব সময় জাকাত নামক ট্যাক্স দেবার মধ্যে ডুবে থাকার প্রশড়বই আসে না। যদি জাকাত বলতে ট্যাক্স বোঝায় তা হলে ধরে নিলাম, একটি গরিব মানুষের সেই গুণটির সম্পূর্ণ অভাব আছে এবং যেহেতু জাকাত প্রদান করাটা বিশ্বাসী বলে গণ্য হবার জন্য একটি অন্যতম প্রধান শর্ত সেই হেতু সে বিশ্বাসী হবার শর্ত হতে কি বঞ্চিত হয়ে পড়ছে না? ‘সালাত’ তথা নামাজ সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়, অথচ ‘জাকাত’- কে বলা হয় শুধু মাত্র কিছু সংখ্যক লোকের জন্য। তাই নয় কি? তা হলে কেমন করে এই দুটো শব্দ সকলের জন্য বার বার আদেশ এবং সতর্ক থাকার জন্য একই সঙ্গে বসানো হলো, যদি একটি আদেশ শুধু কতকের জন্য হয়ে থাকে এবং অন্যটি সকলের তরে? তা হলে জাকাতের কোরান-ই অর্থ কী? খুব সংক্ষেপে উত্তরটি হলো, মানুষ আল্লাহ হতে যা কিছু লাভ করে যথা ধন, বিদ্যা-বুদ্ধি, ভাবনা ইত্যাদি চিত্তবৃত্তির সর্বপ্রকার গুণাবলি সকলই আল্লাহ্ দান। আল্লাহ্র এই সমস্ত দান ও অনুগ্রহগুলোকে তাঁরই নিকট উৎসর্গ করার নাম হলো জাকাত। মানবীয় আমিত্ব ও আপন ভাবধারা আল্লাহ্ নিকট বিলিয়ে দিতে হয়। আমিত্বকে নিজের মাঝে রাখলে তাঁর সঙ্গে সংযোগ হয় না। তাই আমিত্বের উৎসর্গ তাঁর সঙ্গে সংযোগের জন্য একান্তই প্রয়োজন। এ জন্য লক্ষ্য করবেন, জাকাত কথাটি কোরান শরিফে প্রায়ই সালাতের সঙ্গে মিলিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন : ‘ওয়াকিমুস সালাতা ওয়াতুজ জাকাত’ অর্থাৎ ‘কায়েম করো (পড়তে বলা হয় নি তথা একরা সালাত বলে নি) সালাত এবং দাও জাকাত।’ সালাত শব্দের যত রকমেরই অর্থ করা হোক না কেন, আসলে সালাতের অর্থ হলো আল্লাহ্র সঙ্গে সংযোগ-প্রচেষ্টা। আল্লাহ্ সঙ্গে সংযোগ করতে গেলেই মানবীয় আমিত্বের বিসর্জন প্রয়োজন হয়। এ জন্য প্রায়ই সালাত এবং জাকাত একত্র করে উল্লেখ করা হয়েছে।

(২:১৭৭) তুমি তোমার মুখ পূর্বে না পশ্চিমে ফিরাও তাহাতে ধর্মপরায়ণতা নাই, কিন্তু ধর্মপরায়ণ সেই ব্যক্তিই যে আল্লাহ্, বিচার-দিবস, ফেরেস্তা, ধর্মগ্রন্থ ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং তাঁহারাই প্রেমে আত্মীয়, এতিম, অভাব-গ্রস্থ, মুসাফির এবং প্রার্থনাকারীদের নিজ সম্পদ হইতে দান করে; এবং ক্রীতদাসদের মুক্তি দেয় ও ‘সালাত’ প্রতিষ্ঠিত করে ও ‘যাকাত’ প্রদান করে। এবং যাহারা সন্ধি করিলে তাহা পূর্ণ করে এবং দুরবস্থা, বিপর্যয় ও সংকটে ধৈর্য ধারণ করে। তাহারাই সত্যপরায়ণ এবং তাহারাই আল্লাহ্-ভীরু (মুত্তাকীন)।

Razzak Dewan - keno Bhikka / Vikka kore Musolman